আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি অভিযানের পর প্রায় ৩০০ মরদেহ উদ্ধার
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, গাজার নাসের এবং আল-শিফা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া এবং ইসরায়েলি অভিযানের পর সেখানে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার ঘটনা খুবই ‘ভয়ঙ্কর’। এসব লোকজনের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে সে বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর বিবিসির।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা প্রায় ৩০০ জনের মরদেহ উত্তোলন করেছে। কিন্তু তাদের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে বা কবে কবর দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে কোনো মরদেহ মাটিচাপা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে খান ইউনিসের এসব হাসপাতালে দুই সপ্তাহ ধরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সে সময় তারা জানিয়েছিল যে, ফিলিস্তিনিরা যেসব মরদেহ কবর দিয়েছে তারা সেগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে। গোয়েন্দা তথ্য থেকে সেখানে জিম্মিদের সম্ভাব্য অবস্থান যাচাই করে দেখা হয়েছে।
এদিকে হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়া ১০ জন জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে তাদেরকে নাসের হাসপাতালে বন্দি রাখা হয়েছিল।
নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি অভিযানের আগে সেখানকার কর্মীরা জানিয়েছিলেন যে, যুদ্ধের কারণে তারা মরদেহগুলো কোনো কবরস্থানে দাফন করতে পারেননি। সে সময় বাধ্য হয়েই তারা হাসপাতালের আঙ্গিনায় মরদেহগুলো দাফন করেন। এর আগে গত নভেম্বরে ইসরায়েলি অভিযানের আগে আল-শিফা হাসপাতাল থেকেও একই ধরনের খবর পাওয়া গেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় একের পর এক হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, এসব হাসপাতালে অবস্থান করে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল হামাস। যদিও ইসরায়েলের এসব দাবি হামাস এবং মেডিক্যাল কর্মীদের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
গাজাকে এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরায়েল। সেখানে বাড়ি-ঘর, হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুল, ভবন কোনো কিছুই ইসরায়েলি হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, নাসের হাসপাতাল প্রাঙ্গন থেকে পাওয়া ২৮৩ জনের মরদেহের বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে বর্তমানে কাজ করছেন তারা। ইতোমধ্যেই ৪২ জনের মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
রাভিনা শামদাসানি নামের ওই মুখপাত্র বলেন, নিহতদের মাটির গভীরে পুঁতে রাখা হয়েছে এবং বর্জ্য দিয়ে
ঢেকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি, নারী এবং শিশু রয়েছে। এছাড়া অনেকেরই হাত বাঁধা ছিল এবং অনেক মরদেহ নগ্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এদিকে এসব মৃত্যুর বিষয়ে স্বাধীন, কার্যকর ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।