কাঙাল হরিনাথের ১৯০ তম জন্মবার্ষিকী।
আজ ২২ জুলাই ২০২৩,।। বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম
ধারক ও বাহক। বাউল সঙ্গীতের অন্যতম পথিকৃৎ,
“কাঙাল হরিনাথের” ১৯০ তম জন্মবার্ষিকী।
(২২ জুলাই ১৮৩৩–১৬ এপ্রিল ১৮৯৬)
হরিনাথ মজুমদার তিনি কাঙাল হরিনাথ নামে সমধিক পরিচিত। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে জন্মগ্রহন করেন।
তিনি ছিলেন একাধারে কবি,গীতিকার,লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক,প্রকাশক ও সমাজ সংস্কারক।
১৮৬৩ খৃষ্টাব্দে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে ‘গ্রামবার্ত্তা
প্রকাশিকা’ নামে পত্রিকা প্রকাশিত করেন এবং পত্রিকা
টির সম্পাদক তিনি নিজেই ছিলেন। ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দে কুমারখালী নিজ গ্রামে ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’পত্রিকাটির জন্য এম,এন,প্রেস নামক নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পূর্ব বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘গ্রাম-বার্ত্তা প্রকাশিকা’-র জনক প্রায় ২০০বছরের কাছাকাছি মানুষের মনে জাগ্রত হয়ে আছেন। যৌবনের প্রারম্ভে তিনি সমাজ সেবার ব্রত গ্রহন করেন। ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ মাধ্যমে অবহেলিত গ্রাম বাংলায় শিক্ষার প্রসার ও সকল প্রকার শোষনের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম করেছেন। নিজ গ্রামে তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয়ও স্হাপন করেন। এই পত্রিকাতেই ফকির লালন সাঁইজির গান প্রথম ছাপা হয়। পত্রিকাটিতে সাহিত্য,দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে প্রবন্ধ নিয়মিত মুদ্রিত হতো।’গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ সে যুগে জমিদার,মহাজন,পুলিশ বৃটিশ সরকার এমনকি জোড়াসাঁকোর বাবু জমিদারদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিল। অত্যাচারিত,অসহায়, নিষ্পেষিত কৃষকসম্প্রদায় কে রক্ষার হাতিয়ার স্বরুপ তিনি সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। বৃটিশ নীলকরের বিরুদ্ধে কাঙাল হরিনাথ ছিলেন আপোষহীন। তিনি ঠাকুর পরিবারের প্রজা বিরোধী আচরণের তীব্র বিরোধিতা করতেন। এজন্য তাঁকে একাধিকবার আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। কথিত আছে ঠাকুর পরিবারের লাঠিয়াল বাহিনী কাঙাল হরিনাথকে আক্রমণ করলে লালন ফকির দলবল নিয়ে
তাঁকে রক্ষা করে। প্রবল দু;শাসনের বৃটিশ আমলেই কাঙাল হরিনাথ সময়ের জাগরণী সুর বাজিয়েছিলেন এবং তাঁর নানা রচনা ও কাজের মাধ্যমে কন্ঠ ও কলম দিয়ে আজীবন মানুষের সেবা করছেন। উনবিংশ শতকে এই মানুষটি নিস্তরঙ্গ গ্রাম বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি নিভৃত পল্লীতে বসে সংস্কৃতির চর্চা ও লোক কল্যানের যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা ব্যতিক্রমধর্মী ও বিস্ময়ের ঘটনা।
বাউল সম্রাট লালন ফকির ছিলেন কাঙাল হরিনাথের
জীবন দর্শনের ভাবগুরু। বিষাদ সিন্ধুর রচয়িতা মীর
মোশাররফ হোসেন তার শিষ্য এবং অক্ষয় কুমার,
দিনেন্দ্রনাথ রায়,জলাধর সেন তারাও তাঁর শিষ্য ছিলেন। তাঁর প্রকাশনা থেকে বিষাদ সিন্ধু প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। কাঙাল হরিনাথের নিজের ১৮টি গ্রন্হ ও তাঁর প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকা প্রকাশের পাশাপাশি কাঙাল হরিনাথ লালন সাঁই এর বাউল দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হওয়ায় তিনি নিজে গান রচনা করেন। ১৮৮০খৃষ্টাব্দের দিকে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি বাউল দল তৈরী করেন। এই দলটি কাঙাল ফকির চাঁদের দল হিসাবে খ্যাতি লাভ করে।
কাঙাল হরিনাথের মতো এই মহান মানুষটি ছিলেন ভালোবাসার মতো মানুষ। আর তিনি আমাদের বুকের
কান্না কে স্পর্শ করার মতো মানুষ ছিলেন। মহান এই মানুষটির স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।