নাকুগাঁও স্থলবন্দর দেড় মাস বন্ধ, ৪ হাজার শ্রমিক কর্মহীন
কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রায় দেড় মাস ধরে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রায় চার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও ভারত থেকে পাথর না আসায় ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারিভাবে পাথর আমদানি বন্ধের ঘোষণা না থাকলেও ভারতের ব্যবসায়ীরা কোনো গাড়ি বাংলাদেশে পাঠাচ্ছেন না।
স্থানীয়রা জানান, দূরত্ব কম হওয়ায় পাকিস্তান আমলে এ বন্দর দিয়ে ভারতেও মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি অঞ্চলে লোক চলাচল করত। কিন্তু পরে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিন দশক পর আবার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
তালিকাভুক্ত পণ্যের মধ্যে নিয়মিতভাবে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। আগে কয়লাও আমদানি করা হতো। বিভিন্ন কারণে বাকি পণ্য আমদানি বন্ধ আছে।
এ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির অন্তর্ভুক্ত ব্যবসায়ী রয়েছেন প্রায় ২৫০ জন। এর মধ্যে ভারত থেকে পাথর আমদানি করেন দেড় শতাধিক ব্যবসায়ী।
১৯৯৭ সালে নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁওয়ে শুল্ক বন্দরের কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছর পর ২০০২ সালে এক প্রজ্ঞাপনে পাথর ও কয়লা ছাড়া সব ধরনের পণ্যের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৯ সালে তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে চালুর ঘোষণা দেন। কাজ শেষে ২০১৫ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পরিচালনায় শুরু হয় কার্যক্রম।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বন্দর দিয়ে আমদানিযোগ্য পণ্যগুলো হলো- পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, বল ক্লে, কোয়ার্টাজ, চায়না ক্লে, গবাদি পশু, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, বৃক্ষ, বীজ, গম, মরিচ, রসুন ও আদা।
স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, দুই মাস আগেও ভারত থেকে আসা পাথর বোঝাই ট্রাক লোড-আনলোড, পাথর ভাঙা মেশিন এবং হেমার ও হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভাঙার শব্দে কর্মচাঞ্চল্য মুখর ছিল এ স্থলবন্দর।
বন্দরে দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে জড়িত প্রায় চার হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে ছিল প্রাণের স্পন্দন। কিন্তু কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই গত ৯ জুলাই থেকে ভারতের ব্যবসায়ীরা পাথর রপ্তানি বন্ধ করে দেন।
এদিকে এলসি করা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রায় শত কোটি টাকার পাথর ভারতে আটকে আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সবুজ এন্টারপ্রাইজের মালিক রুস্তম আলী ও আশিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যেই পাথর আসা শুরু হয়ে যাবে এমন আশ্বাস দিয়ে আসছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের আশ্বাসের ওপর নির্ভর করে চল্লিশ দিন পার করেছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।
“তাই সরকারের কাছে দাবি, ভারতের সরকারের সঙ্গে কথা বলে যেন পাথরসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করে দেন। তাতে বন্দরের প্রাণচাঞ্চল্য এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।”
এদিকে স্থলবন্দরে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, এ বন্দর দিয়ে ১৯টি পণ্য আমদানির অনুমোদন থাকলেও শুধুমাত্র ভারত ও ভুটানের পাথর এবং কয়লা আমদানি হচ্ছে।
নাকুগাঁও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া বলেন, বছর খানেক আগে কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শুধু ভুটান ও ভারতের পাথরের উপর নির্ভর করে টিকে আছে বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন বন্দরের চার হাজার শ্রমিক।
পণ্য আমদানির ওপর জোর দিয়ে তারা আরও বলেন, পাথর আমদানি ছাড়াও অন্যান্য পণ্য আমদানি করার সুযোগ করে দিলে শ্রমিকদের একেবারে বেকার বসে থাকতে হত না। অসহায় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবসায়ী এবং সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
নাকুগাঁও আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান জুয়েল বলেন, “পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় আমাদের কোটি কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে। এতে আমাদের লোকসানে পড়তে হয়েছে। তবে এ সপ্তাহের মধ্যে পাথর আসা শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।”
এদিকে আমদানি-রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীদের লোকসানের পাশাপাশি সরকারও প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বলে বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়।
নাকুগাঁও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, চলতি বছরের জুনে এ বন্দরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৫ লাখ ৮৮ হাজার। আর জুলাই ও অগাস্টে ভুটানের কিছু পাথর আসায় রাজস্ব আদায় হয়েছে নামমাত্র।
আমদানি চালু থাকলে দুই মাসে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো বলে তিনি জানান।