আওয়ামী লীগের লোকেরা দুর্নীতি করে টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজকে অসহায় হয়ে গেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চাল, ডাল, তেলের দাম তিন-চার গুণ বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে অনেক। তবু মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষক সেচ দিতে পারেন না। আওয়ামী লীগের লোকেরা ব্যাংকগুলোয় দুর্নীতি করে সব টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এ সরকার নিজেরা দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করেছে। ফলে আজ দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।’ রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড
হোটেল মোড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল যুবদল,স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে রোড মার্চে
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রংপুর থেকে এ রোড মার্চ শুরু হলো। এ রোড মার্চ শেষ হবে সেদিন, যেদিন আমরা এ সরকারের পতন ঘটাতে পারব। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না । দেশের লাখ লাখ মানুষ বিএনপির এক দফা দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছে। যদি সরকার শান্তিপূর্ণভাবে এ দাবি মেনে নেয় তাহলে ভালো। এ দাবি না মানলে লাখো মানুষের উত্তাল তরঙ্গ তৈরি হবে। আর সেই তরঙ্গে সরকার ভেসে যাবে। জনগণের সরকার গঠিত হবে।’ রংপুরের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “বিখ্যাত নুরলদীনের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল এ রংপুর থেকেই । আবার সেই রংপুর থেকেই তরুণরা আপনাদের সবাইকে ডাক দিয়েছে এ সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে সরকারের আমলে পরপর দুটো নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়ে যায়, চুরি হয়ে যায়, জনগণ ভোট দিতে পারে না সেই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন করা যায়
না। সেজন্য শুধু বিএনপি নয়, সারা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। এ সরকার বারবার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দিতে পারেনি। অথচ আমাদের দেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গণতন্ত্রের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিচালনা করার জন্য।” বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম । তিনি অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ সরকারের কাছে তার পরিবার ও চিকিৎসকরা বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বারবার বলেছে । কিন্তু সরকার এসব কথা শুনছে না। অথচ প্রধানমন্ত্রী যখন বন্দি ছিলেন তখন তিনি কানের অসুখের কথা বলে আমেরিকা গিয়েছিলেন। আর আজ তিনিই খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে দিচ্ছেন না।’
দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আজকে অসহায় হয়ে গেছে দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চাল, ডাল, তেলের দাম তিন- চার গুণ বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে অনেক। তবু মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষক সেচ দিতে পারেন না। আওয়ামী লীগের লোকেরা ব্যাংকগুলোয় দুর্নীতি করে সব টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এ সরকার নিজেরা দুর্নীতির পাহাড় তৈরি করেছে। ফলে আজ দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি অংশ নেবে। অন্যথায় এ সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাব না।’ রোড মার্চে উপস্থিত ছিলেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন, জেলা এরপর
বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা।
রংপুরে রোড মার্চ কর্মসূচির উদ্বোধনের পর গাড়িবহর নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি মহাসচিব । এ সময় রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট জেলার নেতাকর্মীরা বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলে মহাসচিবের সঙ্গে দিনাজপুরে আসেন ।
বেলা পৌনে ২টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছায় রোডমার্চ। সেখানে অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি বলেন, “মানুষের ভোটের অধিকার ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারুণ্যের মিছিলে রাজপথে নেমেছি। জনগণ সরকারকে আর একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না। বিএনপি সরকারের পাতানো নির্বাচনে যাবে না।’এ সময় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
বেলা সোয়া ৩টার দিকে রোড মার্চটি দিনাজপুরের রানীরবন্দর এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে দিনাজপুরে জনসভাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন মির্জা ফখরুল। এর আগে দুপুর ১২টা থেকে দশমাইল এলাকায় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা ২টার মধ্যে ভূষিরবন্দর-দশমাইল থেকে জনসভাস্থল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে স্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। গাড়িবহর নিয়ে বিকাল ৫টায় রোড মার্চটি দিনাজপুর ট্রাক টার্মিনালে পৌঁছার পর জনসভা হয়।
গত শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুটি রোড মার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর একটি ছিল গতকাল রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত। আজ বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত আনুষ্ঠিত হবে আরেকটি রোড মার্চ