এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন কমেছে
দেশের ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা উত্তোলন অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে গ্রাহকরা বুথ থেকে ৩২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা নগদ উত্তোলন করেছেন, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। জুনে এটিএম বুথ থেকে ৪৩ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। সে হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে নগদ উত্তোলন প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। শুধু এটিএম বুথ থেকে নগদ উত্তোলনই নয়, বরং জুলাইয়ে দেশের পেমেন্ট ব্যবস্থার বেশির ভাগ মাধ্যমেই লেনদেন কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। তবে জুলাই ছাড়া ফেব্রুয়ারির পর কোনো মাসেই এমএফএসের লেনদেন ১ লাখ কোটি টাকার নিচে নামেনি। চলতি বছরের জুনেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। বর্তমানে দেশে এমএফএস হিসাবধারীর সংখ্যা ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৯ হাজার ৮৩৪।
চলতি বছরের জুনে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে ৪৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। কিন্তু জুলাইয়ে ইন্টারনেট-ভিত্তিক এ লেনদেন ৪৬ হাজার ২৪৩ কোটিতে নেমে আসে। জুলাইয়ে ব্যাংকিংয়ের প্রধানতম উপকরণ ‘চেক’-এর মাধ্যমে লেনদেনও কমেছে। একই সঙ্গে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি), এজেন্ট ব্যাংকিংসহ অন্যান্য লেনদেন ব্যবস্থায়ও অর্থ উত্তোলন ও জমা কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
দেশের একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বণিক বার্তাকে বলেছেন, গত দুই বছর দেশের কোনো না কোনো ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে অনেক গ্রাহকই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে নগদে সংরক্ষণ করছেন। ব্যাংকে অর্থ লেনদেন কমে যাওয়ার পেছনে আস্থার ঘাটতিরও ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানেও এ বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়। দেশের ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক গত তিন বছরে বিপুল পরিমাণ নতুন নোট ছাপিয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যুকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৯১ হাজার ৯১৩ কোটি টাকাই ছিল ব্যাংকের বাইরে। ব্যাংকগুলোর হাতে নগদ অর্থ ছিল ২০ হাজার ৩৪ কোটি টাকা।
দেশের ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার ফেনী শহরে পাঁচটি ব্যাংকের এটিএম বুথ ঘুরেও টাকা পাননি। বেশির ভাগ এটিএম বুথ ছিল নষ্ট কিংবা নেটওয়ার্ক সমস্যাগ্রস্ত। দুটি এটিএম সচল থাকলেও সেগুলোয় টাকা ছিল না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখন এটিএম বুথে একই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে চতুর্থ প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ‘অনেক ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ নেই। এ কারণে ইচ্ছাকৃতভাবেও তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো এটিএম বুথ অচল করে রেখেছে।’
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে এখন দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যের সরবরাহ কম। আমানতের প্রবৃদ্ধি দেখলেই সেটি দৃশ্যমান। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে, এটি সত্য। কিন্তু সব ধরনের লেনদেন কমে যাওয়াটি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ঈদসহ যেকোনো উৎসবের সময় দেশে লেনদেন বাড়ে। লেনদেন কমে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করতে হলে আমাদের আরো দুই-তিন মাসের চিত্র দেখতে হবে।