কুষ্টিয়া কেএনবি এগ্রো ফুড জেলা পরিষদের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মার্কেট ভেঙ্গে জমি দখল
কুষ্টিয়া কেএনবি এগ্রো ফুড জেলা পরিষদের নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মার্কেট ভেঙ্গে জমি দখল
স্টাফ রিপোর্টার : কুষ্টিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা পরিষদের নাম ব্যবহার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে কেএনবি এগ্রো ফুড। পোল্ট্রি ও হ্যাচারী ফিড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেএনবি এগ্রো ফুড কারখানার মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান নাসির দোতলা মার্কেট ভেঙে জমি দখল করেছেন।
ঘটনার প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর এবিষয়ে মুখ খুললেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল আজম। তার দাবি কুষ্টিয়ার বটতৈল এলাকার প্রামাণিক সুপার মার্কেট। এই মার্কেটটি কেএনবির সামনে হওয়ায় কামরুজ্জামান নাসির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে জেলা পরিষদের ভুয়া লিজ বানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের নাম ব্যবহার করেছেন কামরুজ্জামান নাসির। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সভাপতি হাজী রবিউল,প্রশাসনের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে অপকর্মটি করেছেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, জেলা পরিষদ কোনো স্থাপনা অপসারণ করতে সাইলে এবারেন স্যাডিকস্ট্রেটদের উটপছাতে জদের গ্রামফ, নিজেদের বুলডোজার এক্সেভেটর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা এ ধরনের কাজ করে থাকেন। কিন্তু প্রামাণিক সুপার মার্কেট অপসারণে জেলা পরিষদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কেএনবি এগ্রো ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির দাবি করেন, জেলা পরিষদ থেকে জমিটি লিজ নিয়েছেন তিনি এবং তাদের তত্ত্বাবধানেই মার্কেট অপসারণ করে তাকে জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে এই লিজ বিষয়ে জেলা পরিষদ সূত্রে জানায়, ‘সিএস খতিয়ানের হিসেব মতে জমিটি তাদের। মাঝখানে এসএ এবং আর এস খতিয়ানে জমিটি ভুলভাবে ব্যক্তি মালিকানায় নথিভুক্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সৃষ্টির আগের জরিপ ধরে কিভাবে একজন প্রজার নামীয় রেকর্ডভুক্ত জমি অন্যকে লিজ দিলেন কোন বিধিতে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ওই কর্মকর্তা। তিনি দায় চাপান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর। যদিও ২০১৬ সালে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী বাদী হয়ে কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করে, যা এখনও বিচারাধীন। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোন যুক্তিতে একজনের নামে রেকর্ডকৃত জমি অন্যকে লিজ দিলেন এমন প্রশ্নে সাবেক চেয়ারম্যান হাজী রবিউলের ওপর দায় চাপান এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে জমিটির মালিকের ছেলে হুসাইনুল ইসলামের অভিযোগ বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে হাজী রবিউল, স্থানীয় আওয়ামী নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তার বাবার মার্কেটটি ভেঙে জায়গা দখল করেছিলো কেএনবির মালিক নাসির।
তিনি জানান, কুষ্টিয়া জেলার জগতি ইউনিয়ন পরিষদের বটতৈল মৌজার সিএস ও এসএ খতিয়ানের সাবেক ১৪২৬ এনং বর্তমান আরএস ২০২৮ দাগের ৯ একর জমিটি তার বাবা রাকিবুল ইসলামের নামে রেকর্ডেভুক্ত। এছাড়াও সিএস, এস এ খতিয়ানেও জমিটি ব্যক্তি মালিকানা, যার কোথাও জেলা পরিষদের নাম উল্লেখ নেয়। এমনকি কুষ্টিয়া—ঝিনাইদহ মহাসড়ক প্রশস্ত করার সময় জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়। যার টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে জমিটির আগের মালিককে। জেলা পরিষদের জমি হলে একোয়ারের টাকা কিভাবে ব্যক্তি মালিককে দেয়া হলো
এছাড়া একই দাগে অন্য জমি ভোগদখল করছেন কেএনবির মালিক। তাদের জমির পাশে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউলের জমিও আছে। আশপাশের সবার জমি মালিকের দখলে থাকলেও শুধু তাদের জমিটি দখল করে নেয়া হয়েছে। মুলত কেএনবি এগ্রো ফুডের সামনে থাকায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক জমিটি দখলে নিতে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রবিউলকে ম্যানেজ করেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত জমিটির খাজনা তিনিই পরিশোধ করে যাচ্ছেন বলেও জানান হুসাইনুল। তার দাবি জমিটি তাদের না হলে সরকার কিভাবে তাদের কাছ থেকে খাজনা নিচ্ছে। এ বিষয়ে বটতৈল ভূমি অফিস সূত্র জানায় বিগত কয়েক যুগ ধরে উল্লেখিত জমিটির খাজনা ব্যক্তি মালিকানা হিসেবেই নেয়া হচ্ছে। ১০ জুন ২০১৯ তারিখ প্রামাণিক সুপার মার্কেট ভাঙার সময় কেএনবি থেকে দেয়া লিজের কাগজে দেখা যায় জমির মৌজা উল্লেখ আছে জুগিয়া, জেএল নং ৭। জমিটির দাগ নাম্বার উল্লেখ থাকলেও নেই খতিয়ান নম্বর। এছাড়া সেখানে জমির শ্রেণি ছিলো নয়নজুলি, যা রাস্তার পাশে পতিত জমি বোঝায়। লিজের কাগজে মার্কেট অপসারণের কোনো উল্লেখ ছিলো না। অথচ প্রামাণিক সুপার মার্কেটটি ছিলো বটতৈল মৌজার, যার জেএল নং ৪১। সেদিনের মার্কেট দখলের ভিডিও চিত্রে দেখা যায় জেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা অজয় সুরেকা, মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন এবং স্থানীয় কয়েকজন সন্ত্রাসীর প্রত্যক্ষ মদতে চলছে মার্কেট ভেঙে জায়গা দখল। তবে এ বিষয়ে জেলা পরিষদ কর্মকর্তাদের দাবি চেয়ারম্যান রবিউলের মৌখিক নির্দেশে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে জোরপূর্বক মার্কেট দখলের বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা স্থান ত্যাগ— করেন।
জমিসহ মার্কেটটির মালিক রাকিবুল ইসলামের ছেলে জানান ১৯৯৫ সালে ক্রয় সূত্রে ৯ শতক জমির মালিক হন তার বাবা। এরপর নাম খারিজ করে আরএস খতিয়ানে নিজের নামে নথিভুক্ত করেন। এরপর বটতৈল ইউনিয়ন এবং পরবর্তীতে কুষ্টিয়া পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন করে ধিরে ধিরে সেখানে দোতলা মার্কেট নির্মাণ করেন তার বাবা। এর বছর খানেক পর তার মার্কেটের পিছে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে কামরুজ্জামান নাসির।
এরপর থেকেই মার্কেটসহ জমিটির ওপর চোখ পরে তার। জমিটি দখলে নিতে নানা ভাবে হয়রানি শুরু করে। নামমাত্র মূল্যে মার্কেটসহ জমি কিনতে চাপ দেয় তার বাবার ওপর।