শীত এসে গেল চারিদিকে কুমড়োর বড়ি দেয়ার ধুম পড়ে গেছে তাই আসুন এবার আমরা জেনে নেই কুমড়ো বড়ি সম্পর্কে..
ডাঃ কামরুল ইসলাম মনা – কুমড়ো বড়ি বাঙালি খাবারে একটি জনপ্রিয় নাম এটি কালাই ডাল এবং শীতকালীন চাল কুমড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। এটি সকলের প্রিয়।
আমার কলেজের মেডাম ডাঃ আফরোজা মেডাম এবং আমার ছাত্রী সাধনা রাণী প্রতি বছর নিজ হাতে তৈরি করে আমাদের দিয়ে থাকেন। ডাঃ আশরাফুল স্যারেরও খুব প্রিয় এই বড়ি। আমারও খুব ভাল লাগে বলে ২/১ টাতে খাওয়া হয়না। বড়ি গুলো প্রায় এক বছর ঘরে রেখে খেতে পারেন। আলু বেগুনের সাথে বড়ি, মাছের সাথে রান্না করা বড়ি অথবা আলু ছুটি/সজনা দিয়ে বড়ির তরকারি আমরা অনেকেই খুব পছন্দ করে খাই। এটি ডিম দিয়ে রান্না করা যায়।
চাল কুমড়ার বড়ি আমাদের অনেকেরই খুব প্রিয় একটা খাবার। কিন্তু গ্রামে আমাদের মা খালারা বড়ি যেভাবে বানান আমরা জানিনা এর পিছনে কি পরিমান শ্রম দেয়া লাগে।
বড়ি দেয়ার উত্তম সময় পৌষ-মাঘ মাস। তবে ফাল্গুন মাসেও বড়ি দেয়া হয় তবে এই ক্ষেত্রে বড়ি শুকানোর সময় সূর্যের তাপ অনেক বেশি হলে বড়ি ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আবার শীতের সময় এটাও লক্ষ রাখতে হয় বড়ি যাতে কম করেও প্রথম তিনদিন ভালো ভাবে রোদ পায়। তা না হলে সেই বড়ি কিছুটা গন্ধ হবার সম্ভাবনা থাকে।
এবার দেখি বড়ি কিভাবে বানানো। বড়ি বানানোর পদ্ধতি খুব সহজ হলেও এতে পরিশ্রম অনেক বেশি। বড়ি বানানোর জন্যে প্রয়োজন চালকুমড়া। চালকুমড়া প্রথমে জালি অবস্থায় থাকে, এরপর সঠিকভাবে এটাকে সংরক্ষন করে বড় করা হয় ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে। আর প্রয়োজন মাসকালাইয়ের ডাল। এই ডাল উত্তরবঙ্গে খাওয়ার ব্যাপক প্রচোলন আছে। এই ডালের আটা দিয়ে বিখ্যাত কালাই রুটি বানানো হয়।
ডালকে ভালোভাবে শুকিয়ে ঢেঁকি বা জাতাতে পিষে আটা বানানো হয়। চালকুমড়াকে কুরে সেটা থেকে বিচিগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে কালাইয়ের আটা মিশিয়ে তাতে খুবই সামান্য পরিমানে লবন দিয়ে খুব ভালোভাবে মাখাতে হয়। এই মাখানোটাই খুব কষ্টের একটা কাজ। দীর্ঘক্ষন ধরে চলে এই মাখানোর কাজ। মাখাতে মাখাতে বড়ির আটা খুব নরম করে ফেলা হয়। এই বড়ির আটা মাখানো এবং রৌদ্র ঠিক ভাবে না পাওয়া গেলে উত্তম মানের বড়ি পাওয়া সম্ভব না।
এইভাবেই আমাদের মা খালাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ভালোবাসায় তৈরি হয় মজাদার সুস্বাদু বড়ি।
আপনারা বেশী বেশি কুমড়ো বড়ি বানান এবং তার থেকে কিছুটা আশপাশের মানুষ কে দান করুন।