কুষ্টিয়ার আলাউদ্দিন নগর মুখরিত ছিল পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলায়

শেয়ার করুন

কে এম শাহীন রেজা ॥
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। যখনই পিঠা-পায়েস, পুলি কিংবা নাড়ুর কথা উঠে তখনি শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ভাসে। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা পুলির উৎসব। তেমনি গত শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুষ্টিয়া কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর শিক্ষাপল্লী পার্কের মাঠ প্রাঙ্গনে পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলার আয়োজন করে আলাউদ্দিন আহমেদ ফাউন্ডেশন। খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। প্রাণের টানে ছুটে আসা সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠেছে উৎসবস্থল। শীতের পিঠা-পুলিসহ নানা বৈচিত্রময় পিঠার পসরা সাজিয়ে উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের মনোযোগ কেড়েছে পিঠা উৎসবে অংশ নেয় স্টলগুলো। সেই পসরায় মুগ্ধ হয়ে স্টলে স্টলে পিঠা খেতে ভিড় জমিয়েছেন সকল বয়সের মানুষ।
আলাউদ্দিন আহমেদ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শনিবার সকাল ৯টার সময় পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপিস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ঠ শিল্পপতি, সমাজসেবক আলাউদ্দিন নগরের রূপকার ও শিক্ষাপল্লীর জনক দানবীর আলাউদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাঙালির ঐতিহ্য প্রবাহেরই একটি অংশ হচ্ছে পিঠা। এ দেশের লোক সংস্কৃতিরও অংশ সবার প্রিয় এই খাদ্যটি। আর পিঠা শিল্পীদের বানানো প্রতিটি পিঠায় থাকে প্রাণের ছোঁয়া, মিশে থাকে আবেগ যা পৃথিবীতে বিরল। পিঠা উৎসবের মুলেই রয়েছে ঢেঁকি। অথচ এখনকার মানুষ এই ঢেঁকি সম্পর্কে জানেই না। ঢেঁকি যেন জাদুঘরে রাখা লাগবে আগামীতে। তিনি আরো বলেন, শীতের সময় বাহারি পিঠার উপস্থাপন ও আধিক্য দেখা যায়। বাঙালির লোক ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহি:প্রকাশ। যান্ত্রিক সভ্যতার এই ইট-কাঠের নগরীতে হারিয়ে যেতে বসেছে পিঠার ঐতিহ্য। সময়ের স্রোত গড়িয়ে লোকজ এই শিল্প আবহমান বাংলার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠলেও এ যুগে সামাজিকতার ক্ষেত্রে পিঠার প্রচলন অনেকটাই কমে এসেছে। আগামীতে আরো বৃহত পরিসরে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে, সেই সাথে আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ জানান।
উক্ত পিঠা উৎসবে ২৮টি ষ্টল ছিল ও কৃষি স্টল ছিল ৮টি। লোকজ এই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে বাঙালির পিঠা পার্বণের আনন্দধারায় দিনব্যাপী পিঠা উৎসব ও কৃষি মেলা ঘিরে মানুষের পদচারনায় মুখরিত ছিল দিনব্যাপী। সকাল থেকে শুরু হওয়া উৎসবের দিন শেষে বিকেলে আয়োজক কমিটি বিচার বিশ্লেষন করে মোট ৩৬টি স্টলের মধ্য থেকে প্রথম স্থান অর্জনকারী চেয়ারম্যান বাড়ীর স্টলের হাতে তুলে দেন বড় একটি ফ্রিজ, ২য় স্থান অধিকারী আলাউদ্দিন আহমেদ ডিগ্রী কলেজ স্টলের হাতে তুলে দেন একটি এলইডি টিভি, তৃতীয় স্থান অধিকারী স্টল আলাউদ্দিন আহমেদ ক্যাডেট স্কুলকে প্রদান করেন একটি ওভেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১ম থেকে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করেন। এছাড়াও অংশগ্রহনকারী প্রতিটা প্রষ্ঠিানকেই শান্তনা পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি। এছাড়াও দিনব্যাপী এ উৎসবের অংশ হিসেবে উৎসবস্থলের মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এতে বিভিন্ন শিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন সময়ের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা, তাদের হাতেও শান্তনা পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকন বলেন, হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী নারীরা। তারা খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। এদেশের নারী সমাজ লোকজ শিল্পকর্মে অত্যন্ত নিপুণ এবং সুদক্ষ। তিনি আরও বলেন, বাঙালিরা চিরকালই অতিথি পরায়ণ। সামাজিক বন্ধনটিও শক্ত। এতে করে শহরের মানুষরা এখানে ছুটে আসবে। পিঠা খাওয়ার পাশাাপশি আনন্দ করবে-সে আনন্দের ভাগ সবাই পাবে। এ জন্যই শীতে আমাদের এই আয়োজন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, আলাউদ্দিন আহমেদ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুল গফ্ফার, আলাউদ্দিন আহমেদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ চয়েন উদ্দিন মোল্লা, আলাউদ্দিন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগন। মেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ স্হানীয় মানুষ পিঠা প্রদর্শন করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হোসেন জোয়ার্দার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *